আওয়ামী লীগের প্রহসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগও ভোট দেয়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামীসহ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের বড় সাফল্য হচ্ছে আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচন বর্জন। পুরো জাতি বিরোধী দলগুলোর ভোট বর্জনকে সমর্থন করেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের সেই প্রহসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগও ভোট দেয়নি। কারণ দিন শেষে দেখা গেছে ৪% থেকে ৫% ভোট পড়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের এবং তাদের পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কেউ ভোট দেয়নি।
মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আওয়ামী লীগ এ দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। মানুষ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন ও সংগ্রাম চালিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। মানুষ এমন একটি নির্বাচন চায়, যেখানে নিজ পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে এবং ভোটের ফলাফল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে প্রকাশ পাবে। শুধু ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হলেই চলবে না, বরং ফলাফলও সঠিক ও স্বচ্ছ হতে হবে। কারণ, ভোট গ্রহণের পর পরাজয়ের আশঙ্কায় ক্ষমতালোভীরা নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের প্রভাবিত করে ফলাফল পাল্টে দেয়। এ জন্য জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সক্ষমতা যাচাই করতে চায়। এই দাবি শুধু জামায়াতে ইসলামীর নয়, বরং বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের দাবি।
বৃহস্পতিবার (০১ মে) রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ধানমন্ডি জোনের বিশেষ শিক্ষা বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, যেনতেনভাবে হওয়া নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। নির্বাচনে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না ঘটলে জনগণ সেই নির্বাচন প্রতিহত করবে। যেকোনো সংঘাত এড়াতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে।
ক্ষমতার পালাবদলের জন্য নয়, বরং একটি বৈষম্যহীন কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্র-জনতা জীবন ও রক্ত উৎসর্গ করেছে। ন্যায়বিচার, সুশাসন ও প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য পরিবর্তন অপরিহার্য। ছাত্র-জনতার প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়তে হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।
ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের হাত থেকে মুক্তি পেতে দলে দলে জামায়াতে ইসলামীর দিকে ঝুঁকছে— উল্লেখ করে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও লুটপাট করেছে, কিন্তু কেউ কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই এসব কর্মকাণ্ডে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের জুলুমে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এবং যেকোনো সময় তাদের বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
৫ আগস্টের পর জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা জনগণের জানমাল রক্ষায় পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করেছে। অন্যদিকে, অন্যরা চাঁদাবাজি ও দখলবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, কালোবাজারি, সিন্ডিকেট ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবে। একটি কল্যাণমূলক ও আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের জন্য তিনি দেশবাসীকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি ও ঢাকা-১০ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, জমিনে দ্বীন কায়েমের আগে নিজের জীবনে ও পরিবারে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী দলের কর্মীদের ইসলামী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আদর্শ ও নৈতিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হয় বলেই, এই দলে রয়েছে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব— যে নেতৃত্বের প্রতি নির্দ্বিধায় আস্থা রাখা যায়।
নতুন বাংলাদেশ গড়তে তিনি ঢাকা-১০ আসনের জনসাধারণকে জামায়াতে ইসলামীকে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ধানমন্ডি জোন পরিচালক অধ্যাপক নুর নবী মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শিক্ষা বৈঠকে ধানমন্ডি জোনের সকল থানা আমীর, সেক্রেটারি ও দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।